জীবনের গল্প যেখানে যেমন……


খুব সন্তপর্নে নোলকটা খুলে ফেলল পাখি। চোখের নদীটার বাঁধ ভেঙ্গে উপচে পড়ছে।বুকের মাঝে একটা অবর্ণনীয় কষ্ট, কষ্টটা বাসা বেঁধেছিল অনেকদিন হয় , আজ সেই বাসায় ঝড় উঠেছে। মানুষটা নাকি আর আসবেনা। এভাবেই চলে যায়

মাত্র পাঁচ মাস আগেই তো বাবায় উনার হাতে তুলে দিল, কি সুন্দর করে বলছিলেন উনি আমি আপনার মেয়েরে দেখে রাখব , এটাকেই কি দেখে রাখা বলে? আচ্ছা উনি কি জানেন আমার ভিতরে এখন উনার একটা অংশ?কেমনে জানবেন, উনাকে ত বলার সময় টাও দেননি।আহারে , মানুষটা কি দুর্ভাগা জেনেও যেতে পারলেননা।আচ্ছা আসলে কে দুর্ভাগা মানুষটা নাকি সে নিজে?

তিনমাস হয় মানুষটা নাই হয়ে গেছে , কেউ কোনও খোঁজ ও দিতে পারলনা। আর কত দিন এরকম একা থাকতে হবে? উনি নাকি সত্যি আর আসবেননা, বিধবাদের নাকি নাক খালি রাখতে হয় , এত তাড়াতাড়ি পাখি কখনই চায়নি মেনে নিতে কিন্তু আজ সবাই বলে গেল সে নাকি উনার অমঙ্গল ডেকে আনছে। এরপর আর তার সাহস হয়নাই নোলক পরে থাকার।

এরপরে আর অনেকগুলো মাস গেলো।নাহ উনি ফিরে এলেননা । আসলে যারা একবার যারা যায়, তারা আর ফিরে আসেনা। কিন্তু উনার কি অইদিন যাওয়ার আসলেই খুব দরকার ছিল? টাকা পয়সার টানাটানি সারা জীবন ই থাকবে তাই বলে কি খুব দরকার ছিল এভাবে চলে যাওয়ার? সর্বনাশা পদ্মা তো সব ই নিয়ে গেল। প্রথমে ভাই , তারপরে বাবা এবং শেষ পর্যন্ত উনাকেও।


ঐদিন রাতে বাজার থেকে ঘরে আসলেন, জেব থেকে লাল চুড়ি গুলা বের করে পাখির হাতে দিয়ে হাস্লেন, আহারে মানুষটা কি  সুন্দর করেইনা হাসতেন , তারপর বউ আসি বলে বের হয়ে গেলেন। একবার পিছু ডেকেছিল পাখি, উনি হেসে বললেন  কাম কিন্তু একজোড়া আনতে পারলে অনেকদিন আর কষ্ট করা লাগেনা ।মানুষটার কাজ কাম বেশি পছন্দ ছিলনা। এইনিয়ে কত ঝগড়া করেছে সে। উনি একবার ফিরে আসুক পাখি আর কোন দিন ঝগড়া করবেনা, কোন দিন না। কিন্তু তিনি কি আর………..

সারাদিনের কাজের পর যে রাত গুলোতেও উনি বের হতেন , অজানা একটা ভয়ে পাখির বুকটা দুরুদুরু কাঁপতো, শঙ্কাটা যদিও অমুলক ছিলনা, রাখালি কাজে যেয়ে বলা ভাল ওপাড় থেকে গরু আনতে যেয়ে আর ফিরে আসেনি এদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। যারা যায় তারা হারায়, যারা থাকে বেঁচে থাকে এক টা মিথ্যা আশা নিয়ে। একটা দীর্ঘশ্বাস আপনাআপনি বের হয়ে আসে পাখির বুক চিড়ে।


বছর দুএক পর……………..

পাখির ছেলেটা আধ একটু বোলে কথা শিখেছে। যে ছেলে আজ পর্যন্ত  বাপকে দেখেই নাই সে সবার আগে বলল কিনা, বাব্বাবাব্বাবাব্বা!!!!! পাখির খুব বিরক্ত লাগে, পরনে একটা সাদা কাপড় জড়িয়ে ছেলের গালে দুটা কষে চড় লাগানোর ইচ্ছা তাকে দাঁতে দাঁত চেপে থামায় ও।

প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে ঘরে ঢুকল ও। ঘরে ঢুকেই চমকে উঠলো।ঘরে কে ?!! ছায়াটা একটু  পর পর নড়েচড়ে উঠছে। আস্তে করে দা তা হাতে নিল ও, কয়েকদিন ধরেই হারামজাদা খুব জ্বালাচ্ছে ।আজ এক্তা দফারফা হওয়া দরকার। ছায়াটা মোড় ঘুরলো ,দা হাতে দাঁড়িয়ে আছে পাখি, কাছে আসলেই এক কোপে আজ…..

ছায়াটা কাছে আসছে, কিন্তু এ কি…  এতো….এতো উনি…উনি এতদিন পর, কোথথেকে???

এতদিন উনি কোথায় ছিলেন? না আজ কোন প্রশ্ন পাখি করবেনা, আজ পাখি শুধু উনাকে দেখবে , উনার হাসি কত দিন পাখি দেখেনা... কতদিন... ঐ যে উনি হাসছেন,পাখি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখে।
Share on Google Plus

About Unknown

0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment

SD ONLINE NEWS