শিশুদের ঠাণ্ডালাগা ও কানে ব্যথা


শিশুরা সাধারণভাবে যে কয়েকটি রোগে ভুগে তার মধ্যে ঠাণ্ডালাগা এবং কানে ব্যথা অন্যতম। ঠাণ্ডালাগার সাথে কানে ব্যথার কি সম্পর্ক আছে এবং এই কানে ব্যথার জন্য কি করতে হবে? এ ধরণের প্রশ্ন আপনার মনে হতেই পারে। এ আসরে ঠাণ্ডালাগাসহ কানে ব্যথা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজের নাক কান ও গলা বা ইএনটি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা.মাহবুবুর রহমান।

তিনি প্রথমেই জানান, শিশুর ঠাণ্ডা লাগার সাথে কানের একটি সম্পর্ক আছে। এই সম্পর্কটি কি- আলোচনার শুরুতেই সে দিকে একবার নজর দেয়া যাক। ঠাণ্ডালাগা থেকে শিশুর নাকে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। নাক থেকে কানে দুইটি নালিকা বা টিউব চলে গেছে। এই নালিকা দুইটি কানের ভেন্টিলেশনে কাজ করে। প্রদাহ নাকের পেছনের দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং ঐ বা নালিকার মুখে যে ঝিল্লি আছে তাতেও সংক্রমণ ঘটাতে পারে। পরিণামে ঝিল্লি ফুলে যায় এবং কানের ভেন্টিলেশন বাধাগ্রস্ত হয়। এদিকে প্রদাহের আরো বিস্তার ঘটে এবং মধ্যকর্ণে ছড়িয়ে পড়ে। মধ্যকর্ণে কোনো প্রদাহ হলে তা শেষ পর্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ব্যথার সৃষ্টি করে। এই ব্যথার সাথে জ্বরও হয়।
তবে শিশুর ঠাণ্ডা লাগলেই কানে ব্যথা হবে এমন কথা সব সময় সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। ঠাণ্ডা লাগার সাথে সাথে কানের দুইটি টিউব বন্ধ হয়ে যাওয়ার একটি সম্পর্ক রয়েছে। নাকের পেছনে অবস্থিত এডেনয়েড নামের মাংসখণ্ডে কোনো সমস্যা থাকলে বা স্বাভাবিক আকারের থেকে বড় হলে তবেই শিশুর ঠাণ্ডা লাগলেই কানে ব্যথা সৃষ্টি হওয়ার কারণ বেশি মাত্রায় ঘটবে বা ঘটার আশংকা থাকবে। এদিকে এডেনয়েড স্বাভাবিক আকারের চেয়ে বড় হলে অনেক সময় নাকে সংক্রমণ না ঘটলে কানে সংক্রমণ ঘটতে পারে। এ জাতীয় কোনো শিশুর যদি যে কোনো কারণে নাকে সংক্রমণ ঘটে তবে অবধারিত ভাবে কানে সংক্রমণ ঘটবে। এভাবে কানের ভেন্টিলেশন টিউব বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে আরো সংকটের সৃষ্টি হতে পারে। শিশু কানে কম শুনতে পারে।
কানের এই সংক্রমণের মধ্যকর্ণ পর্যন্ত বিস্তার ঘটতে পারে এবং শিশুর কানে শেষ পর্যন্ত পুঁজ জমতে পারে। সঠিক সময় এই রোগের চিকিৎসা না করা হলে তা কানের পর্দাকে ছিদ্র করে বের হয়ে আসতে পারে। শিশুর কান পাকার রোগ নিয়ে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গেলে এ কারণে চিকিৎসক প্রথমেই নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেন যে তার এই রোগের উৎস এডেনয়েড নয়। বা শিশুর নাকে কোনো সংক্রমণ আছে কিনা।
কান পাকার মতো সমস্যা বহিঃকর্ণে দেখা দিতে পারে। কানের পর্দার বাইরে সংক্রমণের কারণে শিশুর কান থেকে জলীয় পর্দাথ বা পুঁজ বের হয়ে আসতে পারে। তবে কানের এ ধরণের সমস্যাকে বোঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু সত্যিকার ভাবে কান পাকা বলতে কিন্তু মধ্যকর্ণের প্রদাহকে এবং সেখান থেকে পুঁজ বের হওয়াকে বোঝানো হয়। তবে এডেনয়েডের সমস্যা ছাড়াও আরো অনেক কারণে কান পাকতে পারে। আঘাতজনিত কারণে শিশুকানের পর্দা ছিড়ে যেতে পারে এবং প্রদাহ হতে পারে। উহারণ দিয়ে বলা যায়, শিশু খেলতে যেয়ে কানে কিছুর খোঁচা খেতে পারে এবং তাতে পর্দা ছিড়ে যেতে পারে। তবে শিশু কানে আঘাতজনিত কারণে বা অন্যকোনো কারণে প্রদাহ হয় নি তবে এডেনয়েড বা কানের ভেন্টিলেশন টিউবের সমস্যা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ধরে নিবেন। কিংবা এ ধরণের সমস্যা নাকের কারণেও হতে পারে। সাধারণ কানের এ রকম সমস্যার চিকিৎসা করতে গেলে চিকিৎসক প্রথমেই কারণ চিহ্নিত করার চেষ্টা করবেন। তিনি সঠিকভাবে কারণটি খুঁজে বের করার পর সে অনুযায়ী চিকিৎসা করবেন।
বাইরের আঘাতের কারণে যদি এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে তবে তার চিকিৎসা এক ধরণের হবে। অন্যদিকে তবে এডেনয়েডের কারণে এ ধরণের সমস্যা তার চিকিৎসাও ভিন্ন হবে। তবে সাধারণ ভাবে এডেনয়েডের কারণে এ ধরণের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকরা তা অপারেশন করে কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই অপারেশন জটিল বা ব্যয়বহুল নয় বলে এর তা দেরি না করে সম্পন্ন করে নেয়া ভাল। তবে কখনো কখনো কানের ভেতর পুঁজ আটকে শিশুর কানে ভয়াবহ যন্ত্রণার সৃষ্টি করতে পারে। চিকিৎসকরা সেক্ষেত্রে তড়িঘড়ি কানের সে ব্যথা কমানোর জন্য বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে নিখুত ভাবে কানের পর্দা কেটে দেন। আর পর্দা কেটে দেওয়ার সাথে সাথে শিশুর কানে পুঁজের চাপ কমে ব্যথা হ্রাস পায়। এই কাটা পর্দা পরে ভাল হয়ে যায়। চিকিৎসকারা এ জাতীয় চিকিৎসার জন্য এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন।
শিশুর কানে ব্যথা হলে বা ঠাণ্ডা লাগলে তার চিকিৎসা করতে অনর্থক সময় নষ্ট করবেন না তাকে নিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাবেন।
Share on Google Plus

About Unknown

0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment

SD ONLINE NEWS