পৃথিবী মানুষের। এবং পৃথিবীর নগরে যা আছে, সব মানুষের। মানুষের জন্যই
পৃথিবীর সৃষ্টি। তার শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্য হলো মানুষ। পৃথিবীর শহরে বেঁচে থাকার
প্রয়োজনে মানুষ বিচরণ করে। হালাল রিযিক অন্বেষণ করে।
হারাম পরিত্যাগ বর্জনীয় ও ধ্বংসযজ্ঞ। হারাম মানুষের অন্তর আত্মা দেহকে নষ্ট এবং পয়মাল করে বীভৎস আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে। হারাম ভক্ষণকারীর শেষ পরিণতি হয় ভয়াবহ। হালাল অন্বেষণকারী বেঁচে থাকে মানুষের ভালোবাসয়। এবং সকলের কাছে সমাদৃত সদারিত হয়ে। শেষ জীবনে তার জন্য অপেক্ষায় থাকে সুভাসিত জান্নাত। মানুষের ধর্ম ইসলাম সকলকে উদ্ভুদ্ধ করে হালাল উপার্জন ও গ্রহণের প্রতি। বর্জন করতে বলে হারামকে। রাসুল সা. বলেন ‘ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো। যা হালাল তাই গ্রহণ করো এবং যা হারাম তা বর্জন করো।’ ইবনে মাজাহ ২১৪৪।
মানবতার ধর্ম ইসলাম মানুষের কল্যাণে জীবিকা অন্বেষণের তাগিদে হালাল পথ দেখিয়েছেন। সুষ্পষ্ট নীতি নির্ধারণ করেছেন। পার্থক্য তুলে ধরেছেন হালাল হারামের। দিয়েছেন কিছু মৌলিক মূলনীতি।
# বস্তুর ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, অবৈধ হিসেবে প্রমাণিত না হলে সব কিছুই বৈধ :
জগতের বুকে সকল সৃষ্টিজীব, সৃষ্টি, আবিস্কার, উদ্ভাবন, আসবাব মূলগতভাবে বৈধ। জগতে সব নির্মাণ হয় বৈধতার ওপর। যতক্ষণ পর্যন্ত কোন সৃষ্টিকে অবৈধ হিসেবে প্রমাণিত না করা যাবে, তাহলে সেটা বৈধ থাকবে। কেননা মৌলিকভাবে সব কিছুই বৈধ। ইমাম সুয়ূতি বলেন- ‘বস্তুর ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো সেটা বৈধ।’ আল-আশবাহ লিস-সুয়ূতি ১৩৩।
# হালাল ও হারাম নির্ধারণের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর :
জগত আল্লাহর সৃষ্টি। বিধান চলবে তার। সৃষ্টির ভালো মন্দ জানেন তিনি। তিনি সব কিছুতে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখেন। ধরার কোন বস্তু হালাল আর কোন বস্তু হারাম, তা নির্ধারণ করবে একমাত্র আল্লাহ। কোনো মানুষ হালাল হারামের নির্ধারক নন। কোনো যুক্তি বাকবিতÐা করে কোনো বিষয়কে হালাল বা হারাম করা যাবে না। শরীয়ত যেভাবে হালাল হারাম নির্ধারণ করেছেন- এ নীতির আলোকে পৃথিবী চলবে। শরীয়ত নির্ধারক একমাত্র মহান আল্লাহ। কুরআনে পঠিত হয়েছে, ‘ বিধানদাতা একমাত্র আল্লাহ।’ আল-আনয়াম ৫৭।
# হালালকে হারাম অথবা হারামকে হালাল মনে করা শিরকতুল্য অপরাধ :
জগতের বিধি বিধান নির্ধারণ করেছেন পৃথিবীর অধিশ্বর । মানুষের কথা ভেবে তিনি দিয়েছেন মানবউপকারী বিধান। মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ করেছেন ধরার সব। মানুষের হাতে সমার্পিত করেছেন তামাম সৃষ্টি। তাদেরকে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন সঠিক পথ এবং শরীয়তের পথ। বলেছেন তার বিধানে কোনো পরিবর্তন হয় না। যাকে তিনি হারাম করেছেন আজীবন হারাম থাকবে। তেমনি হালালের বিধান। কিন্তু এর বিপরীত মনোভাব পোষণ করা আল্লাহর বিধান অস্বীকারের নামান্তর। এবং তা হারাম ও শিরক। শিরক সবচে বড় কবীরা গুনাহ। আল্লাহ শিরক গুনাহ মাফ করেন না।
# কোনো কিছু হারাম হয় বস্তুর ক্ষতি ও অপবিত্রতার কারনে:
মৌলিকভাবে সব কিছু বৈধতার সূতোয় বাধা। প্রত্যেকটা বস্তুর আবির্ভাব হয় বৈধতার ওপর। তবে একটি বৈধ বস্তু কখনো কোনো পারিপার্শ্বিকতার কারনে অবৈধ হয়ে যায়। হারাম হয়ে যায় বস্তুর ক্ষতি ও অপবিত্রতার লক্ষণে। যেমন, কুকুর একটি অপবিত্র প্রাণী। এবং তার গোসত মানবজাতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সুতরাং কুকুর হারাম। আল্লাহ বলেন- “ তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কণ্ঠারোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চস্থান থেকে পতনের ফলে মারা যায়, যা শিং এর আঘাতে মারা যায়, এবং যাকে হিং¯্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করো। যে জন্তু যজ্ঞবেদীতে যবেহ করা হয়, এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দারা বণ্টন করা হয়। এসব গোনাহের কাজ।’ মায়েদা ০৩।
# হালাল জিনিস যথেষ্ট পরিমাণে আর হারাম জিনিস অতিরিক্ত পর্যায়ে রয়েছে:
হালাল হারামের সংসার এ জগত। আমাদের চারপাশে বিরাজ করছে হালাল হারাম। সমাজে ছড়ানো আছে হালাল হারামের বিবর্ণ ক্ষেত। তবে হালালের তুলনায় হারামের আসবাব সরাঞ্জম বেশি। হালালের ক্ষেত্র হলো- ব্যবসা, কৃষিক্ষেত্র, শিল্প-কারখানা ও পেশাগত ক্ষেত্র। হারামের ক্ষেত্র হলো, মাদকদ্রব্যের ব্যবসা, সুদের ব্যবসা, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ কুক্ষিগত করা, যেমন ঘুস, চুরি-ডাকাতি ইত্যাদি ভাস্কর্য নির্মাণ, প্রাণীর চিত্রাঙ্কন হারাম জিনিসের উৎপাদন ও বিপণন, পতিতাবৃত্তি, দেহ ব্যবসা, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি , ধোঁকাবাজি, জুয়া, লটারি, ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয়, অনিশ্চয়তার ব্যবসা, নিজের অধিকার/দখলভুক্ত নয় এমন সম্পদ বিক্রয়, পরিমান ও পরিমাপে কম দেয়া ,অবৈধ মজুদদারি, কৃত্তিম সংকট তৈরি করে মূল্য বাড়ানো, মিথ্যা শপথ করে পণ্য বিক্রি করা ইত্যাদি ।
# হারাম জিনিসের প্রতি উদ্বুদ্ধকারী জিনিসও হারাম হিসেবে বিবেচিত :
যে সমস্ত জিনিস মানুষকে হারামের দিকে টেনে নিয়ে যায়, হারাম কাজ করতে উৎসাহিত করে তা হারাম। জুয়া মানুষকে হারাম কাজের প্রতি উদ্ভুদ্ধ করে। চুরি করতে শেখায়। পরের ধন সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করতে প্ররোচিত করে সুতরাং জুয়া হারাম। আল্লাহ বলেন, “ হে মোমিনগণ! জেনে রাখ, মদ জুয়া মূর্তি এবং পাশা খেলা, ফাল গ্রহণ ইত্যাদি অতি অপবিত্র জিনিস ও শয়তানের কাজ। অতএব তোমরা তা পরিত্যাগ করো। তবেই তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারবে।” মায়েদা ৯০।
# হারাম দ্রব্যকে মিথ্যাভাবে হালালরুপে প্রদর্শন কারও হারাম :
মৌলিকভাবে যে জিনিস হারাম তা গর্হিত। বর্জনীয়। হারাম বস্তু পরিত্যাগযোগ্য। এবং হারাম বস্তুকে মিথ্যাভাবে হালাল বলে চালিয়ে দেওয়া কিংবা প্রদর্শন করা জঘন্য অপরাধ। এরকমটি করা হারাম। এখানে ধোকা দেওয়া হচ্ছে। প্রতারণা করা হচ্ছে। মানুষের বিশ্বাসের ওপর আঘাত করা হচ্ছে। যা সভ্য পৃথিবী সমর্থন করে না।
# ভালো নিয়্যতে হারাম করলেও হারাম কাজ হালাল হয়ে যায় না :
শাক দিয়ে যেমন মাছ ঢাকা যায় না তেমনি ভালো নিয়্যতে হারাম কাজ করলেও হালাল হয় না। চোরি যদি কেউ মসজিদ নির্মাণের জন্য করে তাহলে তার চোরি হালাল বা বৈধ হবে না। যদিও মসজিদ নির্মাণ পূণ্যের কাজ।
# সন্দেহপূর্ণ জিনিস পরিত্যাগযোগ্য :
কোনো বস্তুর বৈধ অবৈধতা নিয়ে যদি সন্দেহ থাকে, তাহলে বস্তু পরিত্যাগ করবে। কারণ সন্দেহ মানুষকে হারামের পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। আর বস্তু যদি হালাল হতো, তাহলে তাতে সন্দেহের কোনো লেশ থাকতো না। হাদিসে এসেছে- নবি সা. বলেন, ‘ হালাল সুষ্পষ্ট এবং হারামও সুষ্পষ্ট। উভয়ের মাঝে বহু অষ্পষ্ট বিষয় রয়েছে। যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহয্ক্তু কাজ পরিত্যাগ করে, সে ব্যক্তি যে বিষয়ে গুনাহ হওয় সুষ্পষ্ট, সে বিষয়ে অধিকতর পরিত্যাগকারী হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহয্ক্তু কাজ করতে দুঃসাহস করে, সে ব্যক্তির সুষ্পষ্ট গুনাহের কাজে পতিত হবার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। গুনাহসমূহ আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা, যে জানোয়ার সংরক্ষিত এলাকার চারপাশে চরতে থাকে, তার ঐ সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে।’ বোখারি ২০৫১।
# হারাম নির্বিশেষে সকলের জন্যই সমহারে হারাম :
ইসলাম আল্লাহর মনোনিত ধর্ম । কল্যাণের ধর্ম। মানবতার ধর্ম। মানুষের ধর্ম। ইসলামে মানুুষে মানুষে ভেদাভেদ নেই। ধনী গরীবে তারতম্য নেই। ইসলামের বিধান সবার জন্য সমান। নামাজ যেমন গরীব ধনী সবার উপর ফরজ তেমনি সুদ বর্জন। এবং তেমনি হালাল হারাম। ইসলাম ব্যক্তি বিশেষের পূজা করে না। কারো মন রক্ষায় ইসলামের বিধান পরিবর্তন পরিবর্ধন হয় না। হালাল হারামের ক্ষেত্রে জগতের সেরা নবিকেও ছাড় দেওয়া হয়নি। স্ত্রীদের হাতে মধু না খাওয়ার ঘটনাকে উল্লেখ করে আল্লাহ নবিকে উদ্দেশ্য করে বলেন- “ হে নবি! আল্লাহ আপনার জন্য যা হালাল করেছেন, আপনি আপনার স্ত্রীদের খুশি করার জন্যে তা নিজের জন্য হারাম করেছেন কেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াময়।” আত-তাহরীম ০১।
# প্রয়োজনে হারামও ক্ষণিকের জন্য হালাল হয়ে যেতে পারে :
ইসলাম সহজ সরল ধর্ম। মানুষকে সহজভাবে বেঁচে থাকতে প্রণোদিত করে। মানুষের কল্যাণে নিবেদিত কাজ করে। মানুষের জীবন মরণের প্রয়োজনে সাময়িকভাবে হারামকেও হালাল করেছে ইসলাম। কোনো অসুস্থ ব্যক্তির আরোগ্য যদি মদ ছাড়া অন্য কোনো বস্তু দারা সম্ভব না হয় এবং তার জীবন যদি বিপন্ন হয় তাহলে তার জন্য ইসলাম মদ ভক্ষণ জায়েজ করেছে। ফতোয়ায়ে শামী ৯/৪৮৮।
মানব জীবনের পূর্ণাঙ্গ ধর্ম ইসলাম মানুষের কল্যাণে বিধান দিয়েছেন। বলে দিয়েছেন সহজ সরল বেঁচে থাকার পথ। মুক্তির পথ। ইসলামের বিধি বিধান মানতে পারলে জীবন হবে সুখময়। আমাদের জীবন সৃজনে নির্মানে হোক আলোকিত এবং আলোড়িত।
হারাম পরিত্যাগ বর্জনীয় ও ধ্বংসযজ্ঞ। হারাম মানুষের অন্তর আত্মা দেহকে নষ্ট এবং পয়মাল করে বীভৎস আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে। হারাম ভক্ষণকারীর শেষ পরিণতি হয় ভয়াবহ। হালাল অন্বেষণকারী বেঁচে থাকে মানুষের ভালোবাসয়। এবং সকলের কাছে সমাদৃত সদারিত হয়ে। শেষ জীবনে তার জন্য অপেক্ষায় থাকে সুভাসিত জান্নাত। মানুষের ধর্ম ইসলাম সকলকে উদ্ভুদ্ধ করে হালাল উপার্জন ও গ্রহণের প্রতি। বর্জন করতে বলে হারামকে। রাসুল সা. বলেন ‘ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো। যা হালাল তাই গ্রহণ করো এবং যা হারাম তা বর্জন করো।’ ইবনে মাজাহ ২১৪৪।
মানবতার ধর্ম ইসলাম মানুষের কল্যাণে জীবিকা অন্বেষণের তাগিদে হালাল পথ দেখিয়েছেন। সুষ্পষ্ট নীতি নির্ধারণ করেছেন। পার্থক্য তুলে ধরেছেন হালাল হারামের। দিয়েছেন কিছু মৌলিক মূলনীতি।
# বস্তুর ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, অবৈধ হিসেবে প্রমাণিত না হলে সব কিছুই বৈধ :
জগতের বুকে সকল সৃষ্টিজীব, সৃষ্টি, আবিস্কার, উদ্ভাবন, আসবাব মূলগতভাবে বৈধ। জগতে সব নির্মাণ হয় বৈধতার ওপর। যতক্ষণ পর্যন্ত কোন সৃষ্টিকে অবৈধ হিসেবে প্রমাণিত না করা যাবে, তাহলে সেটা বৈধ থাকবে। কেননা মৌলিকভাবে সব কিছুই বৈধ। ইমাম সুয়ূতি বলেন- ‘বস্তুর ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো সেটা বৈধ।’ আল-আশবাহ লিস-সুয়ূতি ১৩৩।
# হালাল ও হারাম নির্ধারণের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর :
জগত আল্লাহর সৃষ্টি। বিধান চলবে তার। সৃষ্টির ভালো মন্দ জানেন তিনি। তিনি সব কিছুতে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখেন। ধরার কোন বস্তু হালাল আর কোন বস্তু হারাম, তা নির্ধারণ করবে একমাত্র আল্লাহ। কোনো মানুষ হালাল হারামের নির্ধারক নন। কোনো যুক্তি বাকবিতÐা করে কোনো বিষয়কে হালাল বা হারাম করা যাবে না। শরীয়ত যেভাবে হালাল হারাম নির্ধারণ করেছেন- এ নীতির আলোকে পৃথিবী চলবে। শরীয়ত নির্ধারক একমাত্র মহান আল্লাহ। কুরআনে পঠিত হয়েছে, ‘ বিধানদাতা একমাত্র আল্লাহ।’ আল-আনয়াম ৫৭।
# হালালকে হারাম অথবা হারামকে হালাল মনে করা শিরকতুল্য অপরাধ :
জগতের বিধি বিধান নির্ধারণ করেছেন পৃথিবীর অধিশ্বর । মানুষের কথা ভেবে তিনি দিয়েছেন মানবউপকারী বিধান। মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ করেছেন ধরার সব। মানুষের হাতে সমার্পিত করেছেন তামাম সৃষ্টি। তাদেরকে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন সঠিক পথ এবং শরীয়তের পথ। বলেছেন তার বিধানে কোনো পরিবর্তন হয় না। যাকে তিনি হারাম করেছেন আজীবন হারাম থাকবে। তেমনি হালালের বিধান। কিন্তু এর বিপরীত মনোভাব পোষণ করা আল্লাহর বিধান অস্বীকারের নামান্তর। এবং তা হারাম ও শিরক। শিরক সবচে বড় কবীরা গুনাহ। আল্লাহ শিরক গুনাহ মাফ করেন না।
# কোনো কিছু হারাম হয় বস্তুর ক্ষতি ও অপবিত্রতার কারনে:
মৌলিকভাবে সব কিছু বৈধতার সূতোয় বাধা। প্রত্যেকটা বস্তুর আবির্ভাব হয় বৈধতার ওপর। তবে একটি বৈধ বস্তু কখনো কোনো পারিপার্শ্বিকতার কারনে অবৈধ হয়ে যায়। হারাম হয়ে যায় বস্তুর ক্ষতি ও অপবিত্রতার লক্ষণে। যেমন, কুকুর একটি অপবিত্র প্রাণী। এবং তার গোসত মানবজাতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সুতরাং কুকুর হারাম। আল্লাহ বলেন- “ তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কণ্ঠারোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চস্থান থেকে পতনের ফলে মারা যায়, যা শিং এর আঘাতে মারা যায়, এবং যাকে হিং¯্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করো। যে জন্তু যজ্ঞবেদীতে যবেহ করা হয়, এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দারা বণ্টন করা হয়। এসব গোনাহের কাজ।’ মায়েদা ০৩।
# হালাল জিনিস যথেষ্ট পরিমাণে আর হারাম জিনিস অতিরিক্ত পর্যায়ে রয়েছে:
হালাল হারামের সংসার এ জগত। আমাদের চারপাশে বিরাজ করছে হালাল হারাম। সমাজে ছড়ানো আছে হালাল হারামের বিবর্ণ ক্ষেত। তবে হালালের তুলনায় হারামের আসবাব সরাঞ্জম বেশি। হালালের ক্ষেত্র হলো- ব্যবসা, কৃষিক্ষেত্র, শিল্প-কারখানা ও পেশাগত ক্ষেত্র। হারামের ক্ষেত্র হলো, মাদকদ্রব্যের ব্যবসা, সুদের ব্যবসা, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ কুক্ষিগত করা, যেমন ঘুস, চুরি-ডাকাতি ইত্যাদি ভাস্কর্য নির্মাণ, প্রাণীর চিত্রাঙ্কন হারাম জিনিসের উৎপাদন ও বিপণন, পতিতাবৃত্তি, দেহ ব্যবসা, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি , ধোঁকাবাজি, জুয়া, লটারি, ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয়, অনিশ্চয়তার ব্যবসা, নিজের অধিকার/দখলভুক্ত নয় এমন সম্পদ বিক্রয়, পরিমান ও পরিমাপে কম দেয়া ,অবৈধ মজুদদারি, কৃত্তিম সংকট তৈরি করে মূল্য বাড়ানো, মিথ্যা শপথ করে পণ্য বিক্রি করা ইত্যাদি ।
# হারাম জিনিসের প্রতি উদ্বুদ্ধকারী জিনিসও হারাম হিসেবে বিবেচিত :
যে সমস্ত জিনিস মানুষকে হারামের দিকে টেনে নিয়ে যায়, হারাম কাজ করতে উৎসাহিত করে তা হারাম। জুয়া মানুষকে হারাম কাজের প্রতি উদ্ভুদ্ধ করে। চুরি করতে শেখায়। পরের ধন সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করতে প্ররোচিত করে সুতরাং জুয়া হারাম। আল্লাহ বলেন, “ হে মোমিনগণ! জেনে রাখ, মদ জুয়া মূর্তি এবং পাশা খেলা, ফাল গ্রহণ ইত্যাদি অতি অপবিত্র জিনিস ও শয়তানের কাজ। অতএব তোমরা তা পরিত্যাগ করো। তবেই তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারবে।” মায়েদা ৯০।
# হারাম দ্রব্যকে মিথ্যাভাবে হালালরুপে প্রদর্শন কারও হারাম :
মৌলিকভাবে যে জিনিস হারাম তা গর্হিত। বর্জনীয়। হারাম বস্তু পরিত্যাগযোগ্য। এবং হারাম বস্তুকে মিথ্যাভাবে হালাল বলে চালিয়ে দেওয়া কিংবা প্রদর্শন করা জঘন্য অপরাধ। এরকমটি করা হারাম। এখানে ধোকা দেওয়া হচ্ছে। প্রতারণা করা হচ্ছে। মানুষের বিশ্বাসের ওপর আঘাত করা হচ্ছে। যা সভ্য পৃথিবী সমর্থন করে না।
# ভালো নিয়্যতে হারাম করলেও হারাম কাজ হালাল হয়ে যায় না :
শাক দিয়ে যেমন মাছ ঢাকা যায় না তেমনি ভালো নিয়্যতে হারাম কাজ করলেও হালাল হয় না। চোরি যদি কেউ মসজিদ নির্মাণের জন্য করে তাহলে তার চোরি হালাল বা বৈধ হবে না। যদিও মসজিদ নির্মাণ পূণ্যের কাজ।
# সন্দেহপূর্ণ জিনিস পরিত্যাগযোগ্য :
কোনো বস্তুর বৈধ অবৈধতা নিয়ে যদি সন্দেহ থাকে, তাহলে বস্তু পরিত্যাগ করবে। কারণ সন্দেহ মানুষকে হারামের পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। আর বস্তু যদি হালাল হতো, তাহলে তাতে সন্দেহের কোনো লেশ থাকতো না। হাদিসে এসেছে- নবি সা. বলেন, ‘ হালাল সুষ্পষ্ট এবং হারামও সুষ্পষ্ট। উভয়ের মাঝে বহু অষ্পষ্ট বিষয় রয়েছে। যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহয্ক্তু কাজ পরিত্যাগ করে, সে ব্যক্তি যে বিষয়ে গুনাহ হওয় সুষ্পষ্ট, সে বিষয়ে অধিকতর পরিত্যাগকারী হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি গুনাহের সন্দেহয্ক্তু কাজ করতে দুঃসাহস করে, সে ব্যক্তির সুষ্পষ্ট গুনাহের কাজে পতিত হবার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। গুনাহসমূহ আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা, যে জানোয়ার সংরক্ষিত এলাকার চারপাশে চরতে থাকে, তার ঐ সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে।’ বোখারি ২০৫১।
# হারাম নির্বিশেষে সকলের জন্যই সমহারে হারাম :
ইসলাম আল্লাহর মনোনিত ধর্ম । কল্যাণের ধর্ম। মানবতার ধর্ম। মানুষের ধর্ম। ইসলামে মানুুষে মানুষে ভেদাভেদ নেই। ধনী গরীবে তারতম্য নেই। ইসলামের বিধান সবার জন্য সমান। নামাজ যেমন গরীব ধনী সবার উপর ফরজ তেমনি সুদ বর্জন। এবং তেমনি হালাল হারাম। ইসলাম ব্যক্তি বিশেষের পূজা করে না। কারো মন রক্ষায় ইসলামের বিধান পরিবর্তন পরিবর্ধন হয় না। হালাল হারামের ক্ষেত্রে জগতের সেরা নবিকেও ছাড় দেওয়া হয়নি। স্ত্রীদের হাতে মধু না খাওয়ার ঘটনাকে উল্লেখ করে আল্লাহ নবিকে উদ্দেশ্য করে বলেন- “ হে নবি! আল্লাহ আপনার জন্য যা হালাল করেছেন, আপনি আপনার স্ত্রীদের খুশি করার জন্যে তা নিজের জন্য হারাম করেছেন কেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াময়।” আত-তাহরীম ০১।
# প্রয়োজনে হারামও ক্ষণিকের জন্য হালাল হয়ে যেতে পারে :
ইসলাম সহজ সরল ধর্ম। মানুষকে সহজভাবে বেঁচে থাকতে প্রণোদিত করে। মানুষের কল্যাণে নিবেদিত কাজ করে। মানুষের জীবন মরণের প্রয়োজনে সাময়িকভাবে হারামকেও হালাল করেছে ইসলাম। কোনো অসুস্থ ব্যক্তির আরোগ্য যদি মদ ছাড়া অন্য কোনো বস্তু দারা সম্ভব না হয় এবং তার জীবন যদি বিপন্ন হয় তাহলে তার জন্য ইসলাম মদ ভক্ষণ জায়েজ করেছে। ফতোয়ায়ে শামী ৯/৪৮৮।
মানব জীবনের পূর্ণাঙ্গ ধর্ম ইসলাম মানুষের কল্যাণে বিধান দিয়েছেন। বলে দিয়েছেন সহজ সরল বেঁচে থাকার পথ। মুক্তির পথ। ইসলামের বিধি বিধান মানতে পারলে জীবন হবে সুখময়। আমাদের জীবন সৃজনে নির্মানে হোক আলোকিত এবং আলোড়িত।