নাম : মুহাম্মদ (সা.)।
উপনাম : আবুল কাসেম।
পিতা : আবদুল্লাহ বিন আবদুল মুত্তালিব (আবদুল মুত্তালিবের দশ সন্তানের সর্বকনিষ্ঠ)।
মাতা : আমেনা বিনতে ওহ্হাব।
দাদা : আবদুল মুত্তালিব বিন হাশেম।
দাদি : ফাতেমা বিনতে আমর।
নানা : ওহ্হাব বিন আবদে মানাফ।
নানি : বোররা বিনতে ওমজা।
বংশলতিকা : মুহাম্মদ (সা.) বিন আবদুুল্লাহ বিন আবদুল মুত্তালিব বিন
হাশেম বিন আবদে মানাফ বিন কুসাই বিন কিলাব বিন মোররা বিন কাআব বিন লুয়াই
বিন গালেব বিন ফেহের (তাঁর উপাধি ছিল কোরাইশ। এখান থেকে কোরাইশ বংশের
প্রচলন) বিন মালেক বিন নজর বিন কানানা বিন খোজাইমা বিন মোদরাকা বিন ইলিয়াস
বিন মুজার বিন নেজার বিন মাআদ বিন আদনান। (এ পর্যন্ত সব ঐতিহাসিকের ঐক্য
আছে।
এ বংশলতিকা হজরত ইসমাইল ও ইব্রাহিম (আ.) হয়ে হজরত আদম (আ.) পর্যন্ত পৌঁছেছে। )
জন্মস্থান : মক্কা (বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত)।
গোত্র : কোরাইশ।
বংশ : হাশেমি।
জন্ম সময় : রাত অতিবাহিত হয়ে প্রত্যুষে।
নবীপত্নীগণ : মক্কা থেকে মদিনায় ইতিহাসখ্যাত হিজরতের মাত্র তিন বছর আগে
হজরত খাদিজা (রা.)-এর ইন্তেকাল হয়। এ সময় নবী করিম (সা.-)এর বয়স ছিল ৪৯
বছর। খাদিজা (রা.)-এর মৃত্যু পর্যন্ত তিনিই ছিলেন নবী (সা.)-এর একমাত্র
স্ত্রী। খাদিজা (রা.)-এর মৃত্যুর পর তিনি একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করেন।
এঁদের অনেকেই ছিলেন বিধবা বা যুদ্ধে স্বামীহারা অথবা স্বামী পরিত্যক্তা
কিংবা দুস্থ। কোনো বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আল্লাহর সরাসরি নির্দেশে। নামের
তালিকা নিচে রয়েছে—
১. হজরত খাদিজা (রা.) : নবী করিম (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী। তিনি বিধবা,
তবে বিদুষী, ধনী নারী ছিলেন। পবিত্র মক্কায় তিনি ‘তাহেরা’—অর্থাৎ পবিত্র
বলে পরিচিত ছিলেন। নবী (সা.)-এর চেয়ে কমপক্ষে ১৫ বছরের বড় ছিলেন তিনি।
নবুয়তের প্রথম জীবনে নবী (সা.)-এর দাওয়াতের কাজে তিনি বিশেষভাবে পাশে
দাঁড়ান।
২. সাওদা বিনতে জামআ (রা.) : প্রথমে সাকরান ইবনে আমরের স্ত্রী ছিলেন।
সাকরানের মৃত্যুর পর নবী (সা.)-এর সঙ্গে তাঁর বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
৩. আয়েশা (রা.) : আবু বকর (রা.)-এর কন্যা। কেবল আয়েশা (রা.)-ই কুমারী
মেয়ে ছিলেন, যাঁদের সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর বিয়ে হয়েছিল। নবী (সা.)-এর
ওফাতের সময় আয়েশা (রা.)-এর বয়স ছিল আঠারো বছর। নবী (সা.)-এর বহু হাদিস
আয়েশা (রা.)-এর মাধ্যমে মানবজাতির কাছে পৌঁছেছে। তাঁর প্রখর স্মরণশক্তি এ
কাজে সহায়ক হয়েছিল।
৪. হাফসা (রা.) : ওমর (রা.)-এর কন্যা ছিলেন তিনি। প্রথম জীবনে উনাইস
ইবনে হোজাফা (রা.)-এর স্ত্রী ছিলেন। উনাইস (রা.) যুদ্ধে শহীদ হওয়ার পর নবী
(সা.) তাঁকে স্ত্রী হিসেবে বরণ করেন।
৫. জয়নাব বিনতে খুজাইমা (রা.) : তিনি মদিনায় নিঃস্বদের জননী হিসেবে
পরিচিত ছিলেন। প্রথম জীবনে তাঁর বিয়ে হয়েছিল তোফায়েল ইবনে হারিছের সঙ্গে।
তালাকপ্রাপ্ত হয়ে তোফায়েলেরই ভাই উবায়দাকে বিয়ে করেন তিনি। উহুদের যুদ্ধে
উবায়দা শহীদ হন। পরে অসহায় জয়নাবকে বিয়ে করেন নবী (সা.)। কিন্তু বিবাহিত
জীবনের ছয় মাসের মধ্যেই তাঁর ইন্তেকাল হয়ে যায়।
৬. সালামা (রা.) : প্রথম জীবনে তাঁর বিয়ে হয়েছিল আবু সালামা (রা.)-এর
সঙ্গে। উহুদের যুদ্ধে আবু সালামা (রা.) শহীদ হন। বিধবা উম্মে সালামাকে
অবশেষে নবী (সা.) স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে নেন। ইতিহাসবিদরা বলেন, নবী
(সা.)-এর স্ত্রীদের মধ্যে তিনিই সবার শেষে মৃত্যুবরণ করেন।
৭. জয়নাব বিনতে জাহাল (রা.) : তিনি ছিলেন নবী (সা.)-এর ফুফাতো বোন। নবী
(সা.) প্রথমে তাঁর এই বোনকে তাঁর পালকপুত্র জায়েদ (রা.)-এর সঙ্গে বিয়ে
দেন। এই বিয়েতে গোড়া থেকেই জয়নাব (রা.)-এর আপত্তি ছিল। ফলে তাঁদের
দাম্পত্য জীবন সুখের হয়নি। পরে তাঁদের পারিবারিক জীবনে বিচ্ছেদ ঘটে।
জয়নাব (রা.)-এর আপত্তিতে এ বিয়ে সংঘটিত হওয়ায় এবং পরে বিচ্ছেদ ঘটায় নবী
(সা.)-এর মনে কিছুটা অনুশোচনা আসে। এ থেকে জয়নাব (রা.)-কে নিজে বিয়ে করার
প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও তত্কালীন আরবের কুসংস্কারের জন্য তা অনুষ্ঠিত হতে
পারেনি। পরে পবিত্র কোরআনের সুরা আহজাবে আয়াত নাজিল হয়। সেখানে পালক ছেলে
ও ঔরসজাত সন্তান সমতুল্য নয় বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। ফলে অত্যন্ত দৃঢ়তার
সঙ্গে কুসংস্কার নির্মূল করার উদ্দেশ্যে নবী (সা.)-এর মাধ্যমে সেই বিধান
বাস্তবায়ন করে দেখানোর প্রয়োজন অনুভূত হয়। তখনই জয়নাব (রা.)-এর সঙ্গে নবী
(সা.)-এর বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
৮. জুওয়াইরিয়া (রা.) : একটি আরব গোত্রের সরদার হারিছের কন্যা। যুদ্ধে
বন্দিনী হয়ে আসেন। মহানবী (সা.) যুদ্ধবন্দির সঙ্গে বিবাহে আবদ্ধ হন।
উপহার হিসেবে গোত্রের সব বন্দি মুক্তি লাভ করে। তাঁর পিতা হারিছও ইসলাম
গ্রহণ করেন।
৯. উম্মে হাবিবা (রা.) : মহানবী (সা.)-এর চাচা আবু সুফিয়ানের কন্যা।
প্রথমে উবায়দুল্লাহ বিন জাহালের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। দুজনই ইসলাম গ্রহণ
করেন এবং আফ্রিকার হাবশায় হিজরত করেন। কিন্তু সেখানে উবায়দুল্লাহ
খ্রিস্টান হয়ে যান। উবায়দুল্লাহ থেকে উম্মে হাবিবাকে মুক্ত করতে তিনি
হাবশার বাদশাহ নাজ্জাশির মাধ্যমে চাচাতো বোন উম্মে হাবিবা (রা.)-কে বিয়ে
করেন।
১০. সাফিয়া (রা.) : তিনি ছিলেন নবীদেরই বংশধর। হজরত মুসা (আ.)-এর ভাই
হজরত হারুন (আ.)-এর অধস্তন বংশধারার কন্যা। প্রথমে কিনানা ইবনে আবিলের
স্ত্রী ছিলেন তিনি। কিনানার মৃত্যুর পর মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে তাঁর বিয়ে
হয়।
১১. মায়মুনা (রা.) : তিনি প্রথমে মাসউদ বিন ওমরের স্ত্রী ছিলেন। সে
তালাক দিলে আবু রিহামের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। আবু রিহাম মারা যাওয়ার পর
মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।
মহানবী (সা.)-এর এত বেশি বিয়ে আজকের যুগে অস্বাভাবিক মনে হলেও তত্কালীন
আরব জগতে এটা ছিল খুবই স্বাভাবিক। এ ছাড়া আগের নবীদের ইতিহাসে দেখা যায়,
সুলায়মান (আ.)-এর ৭০০ স্ত্রী ছিল, দাউদ (আ.)-এর ৯৯ জন এবং ইব্রাহিম (আ.)-এর
তিনজন, ইয়াকুব (আ.)-এর চারজন, মুসা (আ.)-এর চারজন স্ত্রী ছিলেন।
হিন্দুদের গ্রন্থ মনুসংহিতায় পাঁচজন স্ত্রী থাকার কথা উল্লেখ আছে।
শ্রীকৃষ্ণের ছিল শত পত্নী ও উপপত্নী। (মনুসংহিতা, অধ্যায় : ৯, শ্লোক :
১৮৩) তত্কালীন আরবেও এমন বহু বিবাহ প্রচলিত ছিল।
কিন্তু মুহাম্মদ (সা.)-এর বিয়ে প্রায় সবগুলোই মানবিক, একটি কোরআনের
আয়াতের বাস্তবায়ন, দু-একটি ইসলামী শরিয়া বাস্তবায়ন। কেউ কেউ ছিলেন মহানবী
(সা.)-এর বৃহত্তর পরিবারের সদস্য, ফুফাতো বোন অথবা চাচাতো বোন। অনেক
বিধবা-অসহায় নারীকে তিনি নিজ স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করেছেন। একজন
বাদে কেউই কুমারী ছিলেন না; বরং মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে অনেকের বিয়ে হয়েছিল,
যাঁদের অনেক সন্তান ছিল, তা নিয়েই।
মহানবী (সা.)-এর এসব বিয়ের মধ্যে কোনো শারীরিক চাহিদাও ছিল না। বরং
বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গে তিনি বিয়ের মাধ্যমে একটি শক্তি সমাবেশও করে থাকবেন,
যা দেখে তত্কালীন কাফের-মুশরিকরাও সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছিল। ইসলামী শরিয়ায় এ
জন্য শারীরিক প্রয়োজনে অধিক স্ত্রী রাখার প্রবণতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সীমারেখায় অনধিক চার স্ত্রী থাকলেও সবার অধিকার আদায় না করতে পারলে তাকে
অন্যায় ও জুলুম বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
পুত্র ১. কাসেম (তাঁর নামানুসারে মহানবী (সা.)-এর উপনাম হয়েছিল আবুল
কাসেম)। ২. তাহের (অনেক ঐতিহাসিক বলেছেন, তাঁর নাম ছিল ‘আবদুল্লাহ’)। ৩.
ইব্রাহিম। (তিনি ছিলেন মারিয়া কিবতিয়া (রা.)-এর গর্ভজাত)।
কন্যা : ৪. ফাতিমা ৫. জয়নাব ৬. রোকাইয়া ৭. উম্মে কুলসুম।
ইব্রাহিম ছাড়া উল্লিখিত সন্তানদের সবাই ছিলেন খাদিজা (রা.)-এর গর্ভজাত।
মুহাম্মদ (সা.)-এর এই তিন পুত্রসন্তানের সবাই শৈশবে মারা যান। তবে কাসেম
সওয়ারিতে আরোহণ করতে পারতেন, এমন বয়সেই মৃত্যুবরণ করেন।