♠হযরত ফাতেমার মর্যাদা।

আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তনয়া নারীকূলের শ্রেষ্ঠ রমণী হযরত ফাতেমা (সা.আ.) এমন একজন ব্যক্তিত্ব যার বিপুল সন্মান, মর্যাদা, ন্যায়-নীতি-আদর্শ, স্বর্গীয় ব্যক্তিত্ব যার সামগ্রিক গুণাবলী আমাদের উপলদ্ধি ক্ষমতার অনেক উর্দ্ধে এবং আমাদের সকলের প্রশংসার চেয়ে অনেক বেশি প্রশংসিত। তিনি পবিত্র কোরআন এবং অসংখ্য হাদীস কর্তৃক ঘোষিত একমাত্র নিষ্পাপ নারী। নবী পত্নী উম্মে সালমা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি " إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا " (সূরা আল আহযাব,আয়াত-৩৩) অর্থাৎ "হে আহলে বাইত! নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা চান তোমাদেরকে পাপ পঙ্কিলতা থেকে দূরে রাখতে এবং সম্পূর্ণরূপে পূত ও পবিত্র করতে"। আয়াতটির শানে নযুল বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, এ আয়াতটি আমার গৃহে অবতীর্ণ হয়েছে। তখন আমার গৃহে সাতজন লোক ছিলেন। তারা হলেন জীব্রাঈল (আ.), মিকাইল (আ.), নবী (সা.), আলী (আ.), ফাতেমা (সা.আ.), হাসান ও হোসাইন (আ.)। আর আমি ছিলাম দরজার মুখে। আমি রাসূল (সা.) কে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি কি আহলে বাইতের মধ্যে গণ্য নই ? উত্তরে তিনি বললেন, না তাদের মধ্যে নও, তবে নিশ্চয় তুমি সঠিক পথের উপর আছো, নিশ্চয়ই তুমি কল্যাণের মধ্যে রয়েছো, তুমি আমার স্ত্রীদের মধ্যে গণ্য। তিনি এমনই একজন মহীয়সী রমণী যাকে বিশেষ নিষ্পাপ ব্যক্তিদের মধ্যে গণ্য করা হয়ে থাকে। যার ক্রোধ ও অসন্তোষকে আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তোষ বলে বিবেচনা করা হয়। তাঁর (ফাতেমা) ও তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি ভালবাসা পোষণ করা ওয়াজিব। আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কোরআন শরীফে বলেছেন : " قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى" (সূরা আস-শূরা, আয়াত-২৩) অর্থাৎ (হে নবী) বলুন আমি আমার রেসালাতের বিনিময়ে আমার পরিবারবর্গের প্রতি ভালবাসা ছাড়া কিছুই চাইনা। আনাস বিন মালেক থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন "রাসূলুল্লাহ (সা.) ছয় মাস পর্যন্ত ফজর নামাজের সময় ফাতেমার গৃহের নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় বলতেন, হে আহলে বাইত, তোমাদের ওপর সালাম ও দরুদ, নিশ্চয়ই আল্লাহ ইচ্ছা পোষণ করেছেন তোমাদের থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে
তাঁর বিভিন্ন মর্যাদা এবং আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বের বিস্ময়কর ও বিভিন্নমুখী পরিচয় আমাদের ন্যায় সীমিত জ্ঞানের মানুষের পক্ষে তুলে ধরা কিভাবে সম্ভব ? সুতরাং স্বয়ং মাসুম ইমামদের থেকে শোনা দরকার। এখানে ইসলামের একজন সন্মানিত নারীর মহিমার কিছু কথা মাসুম ইমামদের পবিত্র মুখ থেকে শ্রবণ করবো : হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) বলেছেন যে, আল্লাহর নির্দেশে একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়ে আমাকে বললেন, হাসান ও হোসাইন বেহেশতের যুবকদের সর্দার আর ফাতেমা সকল নারীদের নেত্রী। রাসূল (সা.) বলেছেন : চারজন রমণী পৃথিবীর বুকে সর্বোত্তম। ইমরানের কন্যা মারিয়াম, খুওয়াইলিদের কন্যা খাদীজা, মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা এবং মুযাহিমের কন্যা আছিয়া (ফেরাউনের স্ত্রী)। নবী করীম (সা.) বলেছেন : জান্নাত চারজন নারীর জন্য প্রতীক্ষমাণ। ইমরানের কন্যা মারিয়াম, ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়া, খুওয়াইলিদের কন্যা খাদীজা এবং মুহাম্মদের কন্যা ফাতেমা। তিনি আরো বলেছেন, ফাতেমা কোন ব্যাপারে রাগান্বিত হলে আল্লাহও তাতে রাগান্বিত হন এবং ফাতেমার আনন্দে আল্লাহও আনন্দিত হন। ইমাম মুসা ইবনে জাফর (আ.) বলেন : রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ পৃথিবীর বুকে চারজন নারীকে মনোনীত করেছেন। তারা হলেন মারিয়াম, আছিয়া, খাদীজা ও ফাতেমা (তাদের সকলের উপর সালাম)
ইমাম আলী ইবনে মুসা আর রেযা (আ.) রাসূলে খোদার নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন; তিনি বলেছেন হাসান ও হোসাইন, আমি এবং তাদের পিতার পরে পৃথিবীর বুকে সর্বোত্তম ব্যক্তি তাদের মা ফাতেমা, আর নারীদের মধ্যে সর্বোত্তম রমণী। নবী করিম (সা.) বলেছেন : ফাতেমা বিশ্বের নারীদের নেত্রী। তিনি আরো বলেছেন ফাতেমা বেহেশতের নারীদের নেত্রী। ইমাম জাফর সাদেকের নিকট জনৈক ব্যক্তি আরজ করলো: রাসূল (সা.) বলেছেন, ফাতেমা বেহেশত্‌বাসী নারীদের নেত্রী। এর অর্থ কি এটা, যে তিনি তার সমসাময়িক নারীদের নেত্রী ? ইমাম প্রত্যুত্তরে বলেন; উপরোক্ত কথাটি হযরত মারিয়মের ব্যাপারে বলা হয়েছে আর ফাতেমা পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল নারীদের নেত্রী। হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) কে জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, হে রাসূলুল্লাহ, ফাতেমা কি শুধুমাত্র তার যুগের নারীদের নেত্রী ? রাসূল (সা.) প্রত্যুত্তরে বললেন : এ কথাটি ইমরানের কন্য মারিয়ামের ব্যাপারে বলা হয়েছে আর মুহাম্মদের কন্যা ফাতেমা পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল নারীদের নেত্রী। হযরত আবু আইয়্যূব আনসারী (রা.) হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন : কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশ থেকে ধ্বনি আসবে, হে মানব সকল! তোমরা তোমাদের মাথা নিচু কর, চক্ষু বন্ধ কর, ফাতেমা এখান থেকে অতিক্রম করছে। আর সত্তর হাজার বেহেশতী হুর তাঁর সঙ্গে আছে। রাসূলে আকরাম (সা.) হযরত ফাতেমাকে বলেছেন: হে ফাতেমা ! আল্লাহ তা'আলা জমিনের বুকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন এবং সেখান থেকে তোমার স্বামীকে মনোনীত করলেন। তিনি আমাকে ওহীর মাধ্যমে জানালেন যে, আমি যেন তোমাকে আলীর সাথে বিয়ে দিই। তুমি কি জান যে, আল্লাহ তোমার মর্যাদা ও সন্মানের দিকে তাকিয়ে তোমাকে এমন ব্যক্তির সাথে বিয়ে দিলেন যিনি সবার আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন এবং যার ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা সবচেয়ে বেশী আর জ্ঞান সকলের চেয়ে অধিক।
Share on Google Plus

About Unknown

0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment

SD ONLINE NEWS