জাহান্নাম অকৃতজ্ঞ বান্দাদের আজাবঘর। যারা
আল্লাহকে অস্বীকার করেছে, আল্লাহর বিধানকে অমান্য করেছে তাদের শাস্তি
প্রদান করার জন্য এ জাহান্নামের সৃষ্টি। জাহান্নামের খাদ্য ও পানীয় সবই হবে
জাহান্নামিদের শাস্তির অংশ। জাহান্নাম সবসময় জ্বলমান। কখনও দুর্বল হবে না,
কখনও নিভবে না। এর অধিবাসীদের আজাবও স্থায়ী। তারা সেখান থেকে সাহায্য
চাইবে; কিন্তু সাহায্যকারী থাকবে না। জাহান্নামিরা আজাবের চোটে চিৎকার
করবে, কাঁদবে এবং খাবার চাইবে। তখন তাদের সামনে এমন খাবার উপস্থিত করা হবে,
যার কারণে তাদের আজাব আরও বেড়ে যাবে। তাদের যন্ত্রণাদায়ক খাবার প্রদান করা
হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামিদের সাত ধরনের খাবারের উল্লেখ
করেছেন।
১. হামিম : হামিম হচ্ছে জাহান্নামের আগুনে
ফোটানো গরম পানি। এ পানি পান করার পর পেটের ভেতরকার সবকিছু গলে যাবে।
আঁতুড়ি তরল পদার্থের মতো গড়িয়ে পড়বে এবং চামড়া ঝলসে যাবে। এ প্রসঙ্গে
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং যাদের পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি যা তাদের
নাড়িভুঁড়ি ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেবে।’ (সূরা মুহাম্মদ : ১৫)।
২. গাসসাক : গাসসাক হচ্ছে অধিক ঠাণ্ডা
পানি, যা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা হওয়ার কারণে পানযোগ্য নয়। এ মর্মে আল্লাহ রাব্বুল
আলামিন বলেন, ‘এ হচ্ছে হামিম ও গাসসাক, অতঃপর তারা একে আস্বাদন করুক।’
(সূরা সাদ : ৫৭)।
৩. সদিদ : পরকালে কাফেরদের স্থায়ী ঠিকানা
হবে জাহান্নাম। এতে তারা অনন্তকাল জ্বলতে থাকবে। তাদের দেহ থেকে গোশত ও
চামড়া বিগলিত হয়ে গড়িয়ে পড়বে। সেটা অত্যন্ত দুর্গন্ধ ও ঘন হবে। এ
দুর্গন্ধময় পুঁজকে সদিদ বলা হয়। এ সদিদই জাহান্নামিদের খাবার হবে। এ
প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘তাদের প্রত্যেকের জন্য পরিণামে
জাহান্নাম রয়েছে এবং পান করানো হবে গলিত পুঁজ, যা সে অতি কষ্টে একেক ঢোঁক
করে গলাধঃকরণ করবে এবং তা গলাধঃকরণ করা প্রায় সহজ হবে না। সর্বদিক থেকে তার
কাছে আসবে মৃত্যু যন্ত্রণা; কিন্তু তার মৃত্যু ঘটবে না এবং এরপর কঠোর
শাস্তি ভোগ করতে থাকবে।’ (সূরা ইবরাহিম : ১৬-১৭)
৪. গাদের মতো পানি : জাহান্নামিরা আজাব ভোগ
করতে করতে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়বে। তারা তখন পানি চাইবে। তখন তাদের গাদের মতো
পানি দেয়া হবে। তা পান করা মাত্রই মুখমন্ডল ঝলসে যাবে। এ পানি
জাহান্নামিদের বাধ্য হয়ে পান করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
‘আমি জালেমদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি অগ্নি, যার বেষ্টনী তাদের পরিবেষ্টন
করে থাকবে। তারা পানি চাইলে তাদের দেয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানি, যা
তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে, এটা নিকৃষ্ট পানীয়! আর জাহান্নামের কত নিকৃষ্ট
আশ্রয়।’ (সূরা কাহফ : ২৯)।
৫. দরি : জাহান্নামিরা যখন খানা চাইবে, তখন
তাদের সামনে দরি উপস্থিত করা হবে। এ দরি এক ধরনের দুর্গন্ধময় বিষাক্ত
কাঁটা। এর দ্বারা দোজখিদের ক্ষুধা নিবারণ হবে না। এরপরও দরিকে খাদ্য হিসেবে
গ্রহণ করতে হবে জাহান্নামিদের। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘দরি (কাঁটার
ঝাড়) ছাড়া তাদের জন্য অন্য কোনো খাদ্য নেই। সেটি তাদের মোটাতাজাও করবে না
এবং ক্ষুধা নিবারণের কাজও দেবে না।’ (সূরা গাশিয়া : ৬-৭)।
৬. গিসলিন : দোজখিদের দেহ থেকে প্রবাহিত
রক্ত ও পুঁজের সমষ্টিকে বলা হয় গিসলিন। এ গিসলিন হবে দোজখিদের নিকৃষ্ট
খাবার। এ ধরনের পচা খাবার দ্বারা দোজখিরা ক্ষুধা মেটাতে চাইলেও ক্ষুধা
মিটবে না। কারণ, এটাও জাহান্নামিদের একটি কঠিন আজাব। এ প্রসঙ্গে পবিত্র
কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতএব, আজকের দিনে এখানে তার কোনো সুহৃদ নেই।
আর কোনো খাদ্য নেই ক্ষত-নিঃসৃত গিসলিন ছাড়া। অপরাধী ছাড়া কেউ এটা খাবে না।’
(সূরা হাক্কা : ৩৫-৩৭)।
৭. জাক্কুম : জাক্কুম এক ধরনের বিষধর
বৃক্ষের ফল, যা জাহান্নামের তলদেশে উৎপন্ন হয়। এই ফল অত্যন্ত ভয়ংকর। এর
দ্বারা জাহান্নামিদের শারীরিক কোনো ফায়দা হবে না। বরং জাক্কুম ফল খাওয়া
মাত্রই জাহান্নামিদের শারীরিক যন্ত্রণা আরও বেড়ে যাবে। এ মর্মে আল্লাহ
তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় জাক্কুম গাছ পাপীর খাদ্য হবে, গলিত তামার মতো পেটে
ফুটতে থাকবে। যেরকম ফোটে পানি। একে ধরো এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের
মধ্যস্থলে, তারপর তার মাথার ওপর ফুটন্ত পানির আজাব ঢেলে দাও, স্বাদ গ্রহণ
করো, তুমি তো সম্মানিত, সম্ভ্রান্ত। এ সম্পর্কে তোমরা সন্দেহে পতিত ছিলে।’
(সূরা দুখান : ৪৩-৫০)। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘এটি একটি গাছ, যা
জাহান্নামের তলদেশ থেকে উৎপন্ন হয়। এর গুচ্ছ যেন শয়তানের মাথা। কাফেররা এ
থেকে খাবে এবং উদর পূর্ণ করবে এর দ্বারা।’ (সূরা সাফফাত : ৬৪-৬৬)।