হযরত
শা’বী রহমাতুল্লাহে আলাইহি বলেছেন, বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি একটি ময়না
পাখি পাকড়াও করল । পাখিটি তাকে বলল, ওহে ! তুমি আমাকে পাকড়াও করলে কেন ?
লোকটি জবাব দিল, আমি তোমাকে যবেহ করে মাংস খাওয়ার জন্য পাকড়াও করেছি । তার
কথা শুনে পাখিটি বলল, আমার গোশত যেমন তোমার তৃপ্তিকর হবে না, তেমন তোমার
ক্ষুধাও মিটবে না; বরং তুমি তার চেয়ে আমার নিকট থেকে তিনটি উপদেশ শুনে নাও,
যা তোমার জন্য বহু উপকারে আসবে । তার একটি উপদেশ শুনাব আমি তোমার করতলে
অবস্থান কালে । দ্বিতীয়টি শুনাব আমি তোমার হাতে থেকে উড়ে গিয়ে বৃক্ষ শাখায়
বসে । আর তৃতীয় উপদেশটি শুনাব পাহাড় চূড়ায় স্থান লাভের পর । তখন
লোকটি বলল, আচ্ছা এবার তোমার প্রথম উপদেশটি শুনাও । পাখিটি বলল, শোন, ‘যখন
কোন কিছু তোমার হাত ছাড়া হয়ে যায় তখন আর তজ্জন্য কোন আক্ষেপ করবে না’ ।
অতঃপর পাখিটি লোকটির
হাত থেকে মুক্ত হয়ে বৃক্ষ শাখায় বসে বলল, ‘যা কখনও হয় না বা হতে পারে না,
তা হয় বা হতে পারে বলে বিশ্বাস করবে না’ । একথা বলে পাখিটি বৃক্ষ শাখা থেকে
উড়ে পাহাড় চূড়ায় পৌছে বলল, ‘হে হতভাগা নির্বোধ ! যদি তুমি আমাকে যবেহ করতে
তাহলে আমার উদরে দুটো মোতি পেয়ে যেতে । মোতি দুটোর ওজন হবে বিশ মেছকাল’ ।
লোকটি পাখিটির মুখে একথা শুনে আক্ষেপ করে বলল, যা হবার হয়ে গেছে । তুমি
আমাকে আরও কিছু উপদেশ দাও । পাখিটি বলল, ‘তোমাকে আর উপদেশ দিয়ে কি হবে ?
তুমি তো ওয়াদা ভঙ্গ কর । আমি কি বলিনি, যদি কোন কিছু হাতছাড়া হয়ে যায়
তজ্জন্য আক্ষেপ করো না । আমি তোমার হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তুমি আক্ষেপ
করলে কেন ? আর আমি বলেছিলাম, যা হয় না বা হতে পারে না, তা হয় বা হতে পারে
বলে কখনও বিশ্বাস করবে না । আসলে তো আমার গোশত রক্ত ও পর-পালক সবকিছু
মিলিয়েও বিশ মেছকাল হবে না । তাহলে আমার পেটে বিশ বিশ চল্লিশ মেছকাল ওজনে
দু’দুটো মোতি থাকবে একথা তুমি কিভাবে বিশ্বাস করে নিলে’ ? একথা বলেই পাখিটি
পাহাড় চূড়া থেকে উড়ে অন্যত্র চলে গেল ।
ঘটনাটি মানুষের সীমাহীন লোভ-লালসার একটি উত্তম দৃষ্টান্ত । যে লোভ-লালসা
মানুষকে এভাবেই অন্ধ ও নির্বোধ করে দেয়, যাতে করে তারা বাস্তব সত্যকেও
বুঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ।
[সূত্রঃ মুকাশাফাতুল ক্বুলূব কৃত ইমাম গাজজালী রহমাতুল্লাহে আলাইহি]