নোংরা জলকে পরিষ্কার করার মতোই ‘কালো মুখ’ চোখের পলকে ফর্সা করার
প্রতিশ্রুতি, আবার কোথাও এক সপ্তাহে রোদে পুড়ে যাওয়া কালো ত্বক ঝকঝকে করে
দেওয়ার চ্যালেঞ্জ। পছন্দের তারকার মুখ দিয়ে দেদার বিকোচ্ছে ‘ফর্সা-মন্ত্র’।
কিন্তু গবেষণা বলছে, সেই মন্ত্রেই লুকিয়ে রয়েছে বিপদ।
একাধিক ফর্সা হওয়ার ক্রিমে উপাদান হিসাবে
অ্যাক্টিভ কার্বন থাকে। যেকোনো জৈবিক পদার্থ পুড়িয়ে, তার থেকে অ্যাক্টিভ
কার্বন পাওয়া যায়। কিন্তু ফর্সা হওয়ার ক্রিমে ব্যবহৃত অ্যাক্টিভ কার্বন
কিংবা মাইক্রো কার্বনের মধ্যে ‘ন্যানো কার্বন’ থাকে। এই ন্যানো কার্বন আলো
এবং হাওয়ার সংস্পর্শে ‘অ্যাক্টিভ অক্সিজেন’-এ রূপান্তরিত হয়। যা চামড়ার
পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। কারণ, এই রাসায়নিক উপাদান কোষ মেরে ফেলে। অ্যাক্টিভ
অক্সিজনের প্রতিক্রিয়ায় চাম়ড়ায় ক্যান্সারের মতো রোগ দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন বহুজাতিক
সংস্থার বহুল ব্যবহৃত ফর্সা হওয়ার ক্রিমে যে অ্যাক্টিভ কার্বন ব্যবহার করা
হয়, সেই উপাদানের সাহায্যে জল পরিষ্কার কিংবা গুড় থেকে চিনি বের করা হয়।
কিন্তু ক্রিমের ব্যবহার বাড়াতে পারে বিপদ। পাশাপাশি যে সব ক্রিম ব্যবহারে
ফর্সা হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে সেগুলিও ভ্রান্ত বলেই তাদের মত। কোনো
ক্রিমের সাহায্যে ত্বকের রং পরিবর্তন সম্ভব নয়।
ত্বক চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী বলেন, ‘কোনো ক্রিম ব্যবহার করে ফর্সা হওয়া যায় না। এর কোনো বৈজ্ঞানিক সত্যতা নেই। বরং বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্যক্তিদের মুখ ব্যবহার করে কিছু কোম্পানি মানুষকে বিভ্রান্ত করে। দীর্ঘ দিন এই ধরনের ক্রিম ব্যবহারের ফল হয় বিপজ্জনক। এর জেরে নানা চর্মরোগ দেখা দেয়।’
ত্বক চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী বলেন, ‘কোনো ক্রিম ব্যবহার করে ফর্সা হওয়া যায় না। এর কোনো বৈজ্ঞানিক সত্যতা নেই। বরং বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্যক্তিদের মুখ ব্যবহার করে কিছু কোম্পানি মানুষকে বিভ্রান্ত করে। দীর্ঘ দিন এই ধরনের ক্রিম ব্যবহারের ফল হয় বিপজ্জনক। এর জেরে নানা চর্মরোগ দেখা দেয়।’
দেহের কিছু অংশ সূর্যরশ্মির স্পর্শে আসে না।
তাই সেই অংশের রং সূর্যরশ্মির স্পর্শে আসা ত্বকের রঙের তুলনায় বেশি উজ্জ্বল
হয়। সূর্যরশ্মির স্পর্শে আসা ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে কিছু সানস্ক্রিন
ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু কোনো ক্রিম ত্বককে ফর্সা করতে পারে না।
যদি কোনো ক্রিমের বিজ্ঞাপনে কোনো ধরনের
রাসায়নিক উপাদান ব্যবহারের কথা বলা হয়, তা হলে সেটা কখনই ব্যবহার করা উচিত
নয়। কারণ, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া চাম়়ড়ায় কোনো ক্রিমের ব্যবহার দেহের
জন্য ক্ষতিকর। দীর্ঘ দিন ধরে এই ধরনের ক্রিমের ব্যবহারের জেরে নানা
অ্যালার্জিও দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফর্সা হওয়ার ওষুধ
ব্যবহার এ দেশে বহুল প্রচলিত। সেই সব ওষুধে থাকা অতিরিক্ত পরিমাণ
স্টেরয়ে়ডের জেরে চামড়ায় নানা সমস্যা তৈরি হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে
সচেতনতা প্রসার কর্মসূচিও চালানো হয়েছে। কিন্তু তার পরেও দেদার বিক্রি
হচ্ছে ফর্সা হওয়ার ওষুধ। পাশাপাশি জনপ্রিয় তারকার মুখ ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন
চলছে।
তবে, অনেকেই মনে করছেন ফর্সা হওয়ার ক্রিমের
জনপ্রিয়তার জন্য দায়ী ‘সোশ্যাল ট্যাবু’। বিয়ের জন্য ফর্সা ত্বকের পাত্রীর
বিজ্ঞাপন কিংবা সুন্দরের সংজ্ঞার সঙ্গে ফর্সা ত্বককে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে
দেওয়া হয়। সেখান থেকেই ফর্সা ত্বকের চাহিদা গড়ে ওঠে।