একটি না পাওয়ার গল্প

 
ইমরানুল আলম
তোমাকে হুট করে এভাবে দেখবো, আশাই করিনি!
- আমিও রীতিমত অবাক, কত বছর পর!
তুমি এখনও দেশেই আছো? আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো দেশের বাইরেই সেটেল হয়ে গেছো!
- সেটেল তো কখনোই হবো না বলেছিলাম, শুধু পেটের দায়ে ছাড়তে পারিনি এই দেশটা, অনেক গাল-মন্দ শুনেও টিকেই গেছি।
বিয়ে করেছ?
- আমার বাচ্চাটা খোলা আকাশ, বিশুদ্ধ বাতাস, নদী- খেলার মাঠ খুব পছন্দ করে, আমি ওর মাঝে আরেকটা হেরে যাওয়া সৈনিকের চিহ্ন দেখি।
কি করছো আজ-কাল, কোথায় আছো?
- নিজের গ্রামেই আছি, এই শহরের কাছে হার মেনে, সব হারিয়ে নিজের অস্তিত্বের কাছেই ফিরে গিয়েছিলাম, যারা আমাকে ফিরিয়ে দেয়নি!
ভালো থাকার জন্য যারা সবার সাথে সাথে আমাকে ছেড়ে দেয়নি, ছেড়ে দেয়নি দৈন্য দশার ভয়ে, তাদের নিয়েই কিছু করে খাচ্ছি আরকি।
এই শহরে কি কাজে এলে?
- দেশের সেরা কৃষকদের তালিকায় নাকি নাম এসেছে, কি কাজে ডেকেছে কে জানে, তাই দেখতে এলাম! হা হা
সব কিছুতে হেয়ালি করার স্বভাবটা এখনও দেখি আছে তোমার!
- হা, যে স্বভাবটার জন্য পৃথিবী আমাকে কয়েক হাত দেখিয়ে দিলো, আমিও তার শেষ দেখেই ছাড়বো! হা হা
আজ না তোমার এই হেয়ালি আমার কাছে খারাপ লাগছে না, কেন বলতো!
- আজ তো আমি তোমার নই, তোমার আর অধিকার নেই আর আমার উপর ভালো লাগার-খারাপ লাগার। আজ তো আমাদের সম্পর্ক, এই হুট করে দেখা হয়ে যাওয়াটা নির্বিকার! তাই হয়তো খারাপ লাগছে না আগের মতন!
আমার কথা মনে পড়ে?
- মনে পড়াটা অনৈতিক হবে হয়তো। তবে মাঝে সাঝে নীতির মধ্যে থাকা খুব কঠিন, যখন হুট করে আকাশ কেঁদে উঠে, কিংবা জোসনা হেসে উঠে, রাস্তায় যখন হুট করে কুকুর ঘেউ ঘেউ করে উঠলে বউ আমাকে জড়িয়ে ধরে।যখন গ্রামের রাস্তায় রিক্সা দেখি, কিংবা যখন একা একা বৃষ্টি ভিজি! তখন নীতি থেকে সরে যাই অনৈতিকভাবেই।
এখনও ঘর- বউ ভুলে গিয়ে নিরুদ্দেশ হউ হুট হাট করে? পড়ে থাকো মাঠ- নদী, পাহাড় কিংবা অজানা কোন যায়গায়?

- এখানে যে এসেছি, বউ জানে না তো। কেবল বলে এসেছিলাম বাচ্চাটাকে দেখে রেখো কয়েকটা দিন।

মনের মতন বউ পেয়েছো তাহলে, যে তোমার কথায় উঠে-বসে!
- আমার জায়গাটা সে বুঝেছে আসলে! প্রথম দিকে একটু সমস্যা হতো, এখন বুঝে গেছে যে আমি ঠিক ওর কাছেই ফিরবো, শুধু ওর কাছেই!
গাড়িতে আমার হাজব্যান্ড, যাই তবে!

- এই রিক্সা, যাবে? চল আজকে তোমাকে নিয়ে তোমার মন মতন ঘুরবো, যতক্ষণ না বৃষ্টি আসে।

** ফারুক সাহেব আর অপরাজিতা দুই জন দুই পথে বাকিয়া গেলো, যেমন করে এক যুগ আগে তারা বাকিয়া গিয়াছিলো।

বৃষ্টি এলো এক সময়! ফারুক সাহেবের পকেটে মোবাইল নেই, কাড়ি কাড়ি টাকাও নেই, নেই তেমন কোন কাগজপত্র। যে ক'টা টাকা আছে, ওটা দিয়ে বাড়ি ফেরা যাবে আরামসে, সেই টাকাটাকে পলিথিনে পুরে নির্ভয়ে বৃষ্টির কোলে নিজেকে ছেড়ে দিলেন।

কতক্ষণ ভিজেছিলেন সেদিন জানি না, তবে সেই বৃষ্টিটা প্রয়োজন ছিলো খুব। এক যুগের অভিমান, অভিযোগ, হাহাকার, ক্রোধ ধুয়ে দেয়ার জন্য তো আর যেই সেই বৃষ্টিতে হতো না, শহর ডুবিয়ে দেয়ার মতন বৃষ্টি ছাড়া হবার কথা না।

এক সময় এই শহর ফারুক সাহেবকে ডুবিয়েছিলো, আজ ফারুক সাহেব এই শহরকে বৃষ্টির জলে ডুবিয়ে বাড়ি ফিরলেন, বাড়ি ফিরলেন জমাট কষ্ট ধুয়ে মুছে, একেবারে তার শুধু ''ওর'' কাছে!
Share on Google Plus

About Unknown

0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment

SD ONLINE NEWS