বাংলাদেশের ইতিহাস

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি জনবহুল ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশটি বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্ব অংশে প্রাচীন ও ঐতিহাসিক অঞ্চলের প্রধান অংশের সাথে দেশটির সীমানা মিলেছে, যেখানে চার হাজারেরও বেশি বছর ধরে সভ্যতা চলছে, ক্যালকোলিথিক যুগেও। এই অঞ্চলের ইতিহাস বাংলার ইতিহাস এবং ভারতের ইতিহাসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এলাকাটির প্রারম্ভিক ইতিহাস হল ভারতীয় সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং হিন্দু ও বৌদ্ধের মধ্যকার দ্বন্দ্বের ইতিহাস। ত্রয়োদশ শতাব্দীর পরে যখন মুসলিম অভিযাত্রীরা, যেমন তুর্কী, ইরানীয়, মুঘল প্রভৃতি এদেশে এসেছিল তখন ইসলাম ধীরে ধীরে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল। পরবর্তীতে মুসলিম শাসকরা মসজিদ এবং মাদ্রাসা নির্মাণের মাধ্যমে রূপান্তরের প্রক্রিয়াটিকে শক্তিশালী করে ।

বাংলা শব্দের উৎপত্তি

বাংলা বা বাংগালা শব্দটির সঠিক উৎপত্তিটি অজানা রয়েছে। খুব সম্ভবত ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি এ অঞ্চলে বসবাসকারী দ্রাবিড় গোষ্ঠী বঙ থেকে বঙ্গ শব্দটির উদ্ভব হয়েছে। অন্যান্য তথ্যসূত্র থেকে ধারণা করা হয় যে অষ্ট্রিক জাতির সূর্যদেবতা "বোঙ্গা" থেকে বঙ্গ কথাটির উদ্ভব হয়েছে। মহাভারত, পুরাণ ও হরিবংশের মতে রাজা বালীর বঙ্গ নামে এক দত্তক পুত্র ছিলেন যিনি বঙ্গ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[১]মুসলিম তথ্যসূত্রগুলো থেকে জানা যায়, হযরত নূহ (আঃ) এর দৌহিত্র হিন্দ এর পুত্র বঙ প্রথমবারের মত এই অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন করেন। রাষ্ট্রকূট রাজা তৃতীয় গোবিন্দের নেসারী শিলালিপিতে প্রথম বঙ্গলা শব্দটির উল্লেখ রয়েছে যেখানে ধর্মপালকে বঙ্গলার রাজা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ "শাহ-ই-বাঙ্গালাহ" নামক উপাধি গ্রহণ করেন এবং তারপর থেকে সকল মুসলিম সূত্রেই বাংলাকে বাঙ্গালাহ বলা হয়েছে।

প্রাচীন বাংলা

প্রাক-ঐতিহাসিক বাংলা

বাংলাদেশে সংগঠিত প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজগুলি ভারতীয় উপমহাদেশের NBPW যুগের (৭০০-২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) নিদর্শন প্রকাশ করে। ভারতীয় উপমহাদেশে লৌহ যুগের সংস্কৃতি প্রায় ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হয় এবং ৫০০-৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। উত্তর ভারতের ১৬টি মহা রাজ্য বা মহাজনপদের উত্থান এবং মৌর্য সাম্রাজ্যের পরবর্তী উত্থানের মধ্যবর্তী সময়ে এই যুগ বিরাজমান ছিল।[৩] প্রাচীন ভারতের পূর্বাঞ্চল, বর্তমান সময়ের বাংলাদেশের বা প্রাচীণ বঙ্গ রাজ্য এই মহাজনপদগুলির অংশ ছিল, যা ষষ্ঠ শতকে সমৃদ্ধ হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।[৪]
ভাষাগতভাবে, এই ভূখণ্ডের প্রাচীনতম জনগোষ্ঠী হয়তো দ্রাবিড় ভাষায় কথা বলত যেমন কুরুক্স, বা সম্ভবত অস্ট্রো-এশীয় ভাষায় কথা বলত যেমন সাওতাল। পরবর্তীকালে, তিব্বতী-বার্মানের মতো অন্যান্য ভাষা পরিবারের লোকেরা বাংলায় বসতি স্থাপন করে। সপ্তম খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল মগধের অংশ হিসেবে ইন্দো-আর্য সভ্যতার অংশ হয়ে উঠেছিল।[৫] নন্দ রাজবংশ হচ্ছে প্রথম ঐতিহাসিক রাষ্ট্র যা ইন্দো-অার্য শাসনের অধীনে বাংলাদেশকে একত্রিত করেছিল। পরবর্তীকালে বৌদ্ধধর্মের উত্থানের পর অনেক পুরোহিত ধর্ম বিস্তারের জন্য এখানে বসতি স্থাপন করেছিল এবং মহাস্থানগড়ের মতো অনেক স্তম্ভ স্থাপন করেছিল।


Share on Google Plus

About Unknown

0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment

SD ONLINE NEWS